মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ২৬ নভেম্বর জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডেকেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও দলটির পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ।
বুধবার বিরোধীনেতার নিজ স্বাক্ষরে পাঠানো এক চিঠিতে এতথ্য জানানো হয়েছে।
বিকালে বিরোধীনেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কাউন্সিল সফল করতে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ কো চেয়ারম্যানদের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন বিরোধীনেতা বেগম রওশন এরশাদ। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়করা হলেন দলের কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি, কো চেয়ারম্যান ও সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি, আবু হোসেন বাবলা, এমপি, সালমা ইসলাম, এমপি। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে বির্ধেী নেতার রাজনৈতিক সচিব ও এরশাদ মুক্তি পরিষদের সাবেক সভাপতি গোলাম মসীহ্কে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে বিরোধী নেতা ও দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেগম রওশন এরশাদ শাহ মোয়াজ্জম হোসেনসহ ত্যাগী নেতাদের ফিরিয়ে এনে নতুন প্রজম্মের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গঠনের আহ্বান জানান।
রওশন এরশাদের চিঠি হুবহু তুলে ধরা হলো:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিল
২৬শে নম্বেভর (শনিবার) ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
আমি বেগম রওশন এরশাদ (এমপি) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির
প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিল
আহ্বান করছি। এই কাউন্সিল ২০২২ সালের ২৬শে নভেম্বর (শনিবার) সকাল ১০:০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত
হবে।
আমি দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং ব্যাংকক এর বামরুনগ্রাদ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এ সময় আমি লক্ষ্য করি, জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য,
নিয়মাবলি এবং পার্টির মূল আদর্শ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বর্তমানে পার্টি গঠনতান্ত্রিক গৃহিত আদর্শ,
নিয়ম ও নীতিমালা থেকে সরে গিয়ে ভ্রান্তপথে অগ্রসর হচ্ছে।
২০১৪ সালের ২রা ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি দেশের
সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা সংরক্ষণ ও দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখেছে। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘোষিত উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে মহাজোটের অন্তর্ভুক্তিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ফলে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। এ সময় পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সরকারের মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। পার্টির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আমি জাতীয় সংসদ এর বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হই। বিদ্যমান রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টি ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
জাতীয় পার্টি একটি মাল্টি ক্লাস গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি লালন করে না। জাতীয় পার্টির অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগীতার কারণেই আজ পদ্মা সেতুর মতো বিশে^র অন্যতম বৃহত্তর অবকাঠামো বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্মিত হয়েছে। জাতীয় পার্টিপদ্মা সেতু নির্মাণের অন্যতম কৃতিত্বের অংশীদার। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের উচিৎ এই কৃতিত্বের অংশীদার হয়ে জাতিকে আশ^স্ত করা। কিন্তু নেতৃত্বের শীর্ষস্থান দখল করা নেতৃবৃন্দ এই কৃতিত্বের অংশীদারীত্বের বিষয়টি জনগণের কাছে তুলে ধরার বিষয়ে অনীহা মনোভাব পোষণ করছেন, যা পার্টির মূল নীতিমালা বহির্ভূত কাজ।
চলমান পাতা-২
দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জাতীয় অর্থনীতিতে লুটপাট এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ বিদেশে পাচার ইত্যাদি বিষয়ে গোটা দেশবাসীকে সচেতন করা একান্ত আবশ্যক। সীমান্তে খুন বন্ধ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সমুন্নত রাখা এবং আমাদের প্রিয় নবী রসূলে করিম হযরত মুহম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে ভিনদেশীদের ঔধত্ব্যপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। বর্তমানে এসব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জাতীয় পার্টির ভূমিকা অত্যন্ত দুর্বল। আমি সাংগঠনিকভাবে তৃণমূলের কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যোগ্যতর নেতৃত্বনির্বাচন এবং বিপরীত গোষ্ঠীর অসৎ আয়ের বিনিময়ে নেতৃত্বপ্রদান এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের বসিয়ে দেওয়ার প্রবনতা জাতীয় পার্টির ঘোষিত নীতির বিপরীত।
স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সমুন্নত রাখা এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জাতীয় পার্টিকে একক দল হিসেবে আবির্ভুত হতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণে নিজস্ব কর্মীবাহিনী পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর দেশপ্রেমিক লড়াকু সৈনিকদের সমন্বয়ে মূল জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী পার্টি হিসেবে আবির্ভুত হতে হবে। এই কর্মকান্ডে যোগ্যতর নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থতার কারণে কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন এখন সময় এবং এরশাদ প্রেমিক নেতাকর্মীদের প্রাণের যৌক্তিক দাবী। তাই জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আমি আগামী ২৬ নভেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ শনিবার সকাল ১০:০০ ঘটিকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, রমনা, ঢাকায় জাতীয় পার্টির দশম কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করছি।
(বেগম রওশন এরশাদ, এমপি)